প্রকাশিত: Sat, Feb 24, 2024 12:29 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 3:26 PM

[১]যারা সরকার উৎখাত করতে চায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদেরই কারসাজি: প্রধানমন্ত্রী [২]রমজানে কোনও পণ্যের অভাব হবে না

সালেহ্ বিপ্লব: [৩] সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি মার্চে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র ছিলো; এখনো আছে। মার্চে দুর্ভিক্ষের কথা বলেছিলাম। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা ৭৫ সালে শিশু রাসেলকেও ছাড়েনি। আমার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিবারই হচ্ছে, বার বার হচ্ছে। এবার যাতে নির্বাচন হতে না পারে, সেজন্য বিরাট ষড়যন্ত্র ছিলো। ২৮ অক্টোবরের কথা মনে করুন। সেদিনের নাশকতা হঠাৎ করে নয়, পরিকল্পিত। যারা নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন দেখলো নির্বাচন আটকাতে পারবে না; তখন তারা অন্য পরিকল্পনা করলো। তাদের আশা ছিলো জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সেটা নিয়ে আন্দোলন করবে। 

[৪] তিনি বলেন, যারা সরকার উৎখাত করতে চায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদেরই কারসাজি। যারা জিনিসপত্র লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ায়, এদেরকে গণধোলাই দেওয়া দরকার। সরকার করলে তো বলবে, সরকার এটা করেছে। তাই বিচারটা পাবলিকেরই করা উচিত।

[৫] মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে (এমএসসি) যোগদানের বিষয়ে জানাতে প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এবার সরকার গঠনের পর এটিই ছিলো তার প্রথম বিদেশ সফর এবং প্রথম সংবাদ সম্মেলন। 

[৬] গণভবনে সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী ১৫ মিনিটের লিখিত বক্তৃতায় তার মিউনিখ সফরের বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। এরপর অংশ নেন প্রশ্নোত্তর পর্বে। 

[৭] প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা বড় কথা। এটা প্রমাণিত সত্য, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। গত ১৫ বছরে সব দিক থেকে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল হয়েছি। ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু হবে। আগামী ৫ বছরে আমাদের কাজ হবে যথাযথ অগ্রগতি নিশ্চিত করা। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

[৮] তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব। আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়। গণমানুষের কথা বলে এবং আন্দোলন সংগ্রাম করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি যদি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি, একটাতো যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাতে ইসলামী। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। সংবিধান সংশোধন করে এদেরকে ভোটের অধিকার দিয়েছে, এমনকি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে যে ফিরে গিয়েছিল তাকেও আবার ফিরিয়ে এনেছে এবং তাদেরকে দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের জনগণের ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছিল। 

[৯] শেখ হাসিনা বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরদের  পকেট থেকে দুটো পার্টি হয়েছে। একটি বিএনপি,  আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সেগুলোরতো আসলে মাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তাদের শিকড় কোথায়। কাজেই তাদের চিন্তা চেতনায় থাকে এমন একটা পরিবেশ হোক কেউ তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। 

[৯.১] সেটা করতে গিয়ে তারা প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি । সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্য জোট পেল ৩০ টি আসন। এরপর থেকেই শুরু হলো এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা। বারবার সে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।

[১০] তিনি বলেন, যে গণতান্ত্রিক ধারা আমরা স্থায়ী করেছি, তার শুভ ফল দেশবাসী পাচ্ছে। তাদের জীবন মান উন্নত হয়েছে । এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। ইতোমধ্যে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা করেছি। এতে প্রতিটি মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষরা জ্বালাও পোড়াও, মানুষ খুন, ট্রেন ও বাসে আগুন দেয়া, মা ও শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে যাচ্ছে।

[১১] শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয় সে রাজনীতি জনগণের জন্যই এবং জনগণের কল্যাণেই কাজ করে । আর রাজনীতি যদি হয় শুধু ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা তাহলে তো মানুষ কিছু পাবে না।

[১২] প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না। সমস্ত ব্যবস্থা করা আছে। রমজান তো কৃচ্ছ সাধনের জন্য। মানুষ একটু কম খায়। তবে আমাদের দেশে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুর নিয়ে বেশি চিন্তা। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সমস্যা হবে না। 

[১৩] নগরীতে যানজট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট কমে এসেছে। এক্সপ্রেসওয়ের বাকি কাজ শেষ হলে আরো সুবিধা হবে। আরো ৫টা মেট্রোরেল হবে। একটা দল আছে, যাদের কিছু ভালো লাগে না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল কেনো করলাম, প্রশ্ন উঠেছে। 

[১৪] তিনি বলেন, মেট্রোরেল করায় এখন সড়কের ওপর গাড়ির চাপ কমেছে। সড়কে যানজট আরো কমাতে হবে। আইজিপিকে বলে দিয়েছি আবার ট্রাফিক লাইট সিস্টেম চালু করে শৃঙ্খলা আনার জন্য। খুব বেশি সময় লাগবে না। সম্পাদনা: ইকবাল খান